ছোটদের ঝুঁকিপূর্ণ জীবন সংগ্রাম
১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ৪ মাঘ ১৪২৪, ২৯ রবিউস সানি ১৪৩৯
ফার্মগেট থেকে আদাবর রুটে চলাচলকারী টেম্পোর হেলপার রানা। গায়ে একটি লাল রঙের সোয়েটার। এই শীতেও একটি হাফপ্যান্ট পরে গলা ফাটিয়ে যাত্রী ডাকছে ফার্মগেট, ফার্মগেট বলে।
চলন্ত টেম্পোতে ঝুলন্ত রানা বাস, ট্রাক, গাড়ির তোয়াক্কা না করে বাতাসে এক রকম ভেসে ভেসেই ফার্মগেট থেকে আদাবর পৌঁছে। তার বসার জন্য সিট নেই, নেই বসার সময়। কারণ তাকে যাত্রী ডাকতে হয়, ভাড়া তুলতে হয়।
অনবরত এই কাজ তাকে বসতে দেয় না। এতো শীতে ফুলপ্যান্ট কিংবা মাথায় টুপি নেই কেন? শীত লাগে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তার নীরব চাহনি অসহায়ত্বই বলে দেয়। কারণ মা মোহাম্মদপুর এলাকায় বাসা-বাড়িতে কাজ করে। বাবা নেই। তিন বোন আর দুই ভাইয়ের সংসারে তার আয়েরও প্রয়োজন আছে। বাড়তি খরচ করার উপায় নেই তার। তবে মা বলেছে বেতন পেলে একটা মাফলার কিনে দেবে। প্রতিদিন তার আয় হয় ২শ থেকে ৩শ টাকা। শাহিনের কাজ ফুল বিক্রি করা।
শাহবাগ এলাকায় গাড়ি থামলে সঙ্গীদের সাথে গোলাপ নিয়ে গাড়ির জানালায় ভিড় করে তারা। দশ টাকায় পাঁচটা ফুল বিক্রি করে প্রতিদিন দেড়শ-দুইশ টাকা আয় করে। পরনে জিন্স প্যান্ট থাকলেও গায়ে শুধু একটা ফুলহাতা স্টাইপ গেঞ্জি। শীত লাগে কিনা জানতে চাইলে বলে, সকালে যখন কাজে আসে তখন শীত লাগে। আস্তে আস্তে শীত কমতে শুরু করে। আবার দাঁড়িয়ে থাকলে শীত লাগে। তার সাথে আর তিন চারজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তবে তাদের কারো পুরো শীতের পোশাক নেই।
গুলিস্তান থেকে আজিমপুর হয়ে নিউমার্কেট যায় সোহেলের (৮) টেম্পো। হাতল ধরে নিউমার্কেট নিউমার্কেট বলে চিত্কার করে যাত্রী ডাকতে হয় তার। কিছুক্ষণের মধ্যে যাত্রীতে ভরে যায়। সে পাদানিতে দাঁড়িয়ে রড ধরে ঝুলতে ঝুলতে যেতে থাকে। তার পরনে বড় একটা সোয়েটার আর একটা ফুলপ্যান্ট, পা খালি। পায়ে জুতা নেই কেন জানতে চাইলে বলে, তিনদিন আগে জুতা ছিঁড়েছে আর কেনা হয়নি। দুই একদিনের মধ্যে কিনবে।
তীব্র শীতে এই দরিদ্র শিশুরা প্রতিদিন বের হচ্ছে জীবিকার তাগিদে। নিজেদের কোনোমত করে সাধারণ পোশাকে পেঁচিয়ে শীত প্রতিরোধের চেষ্টা করে কাজে নামছে দরিদ্র কত শত শিশু। অনেক সময় দেখা যায়, শীতের কাপড় ছাড়াই তারা কাজ করছে।
জাতীয় শিশু নীতি (২০১১), শিশু আইন (২০১৩), আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদের মতো বড়সড় আইন-কানুনগুলো প্রতিরোধ করতে পারছে না ছোটদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম আর এই শীত থেকে। সকলের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম স্পর্শ করতে পারে না ওদের। দেয় না তাদের প্রচণ্ড শীতে একটু উষ্ণতা।
এই নিউজ মোট 6380
বার পড়া হয়েছে